Last updated on November 18th, 2021 at 06:59 pm
হ্যালো রিডার! কেমন আছেন? আমি গত আগস্টে ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল) এর লাইফস্টাইল কার্ড নিয়েছি ও নিয়মিত ব্যবহার করছি। এই কার্ডটি একটু ডূয়েল কারেন্সি প্রিপেইড কার্ড।এখন পর্যন্ত এর সুযোগ সুবিধা ও ইউজার এক্সপেরিয়েন্স খুল ভাল লেগেছে আমার কাছে। আমি সাধারণত ভ্রমণ সংক্রান্ত তথ্যমূলক লেখা লিখি। এই কার্ডটিও ভ্রমণের সাথে খুব সম্পর্কিত তাই ভাবলাম এই কার্ডের বিস্তারিত লিখে একটা পোস্ট করি। আশা করি একটূ মনোযোগ দিয়ে পড়লেই সব বুঝতে পারবেন। চলুন তো শুরু করা যাক।
লাইফস্টাইল ও একুয়া কার্ড দুটির সুযোগ সুবিধা, আবেদন ও অন্যান্য প্রক্রিয়া সবই হুবুহ এক। তাই এই পোস্টটির সবকিছু আপনি একুয়া কার্ডের মনে করেও পড়তে পারেন। শুধু দুইটা কার্ড ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্ক ইউজ করে (একটা মাস্টারকার্ড ও অন্যটা ভিসা)।
ইবিএল ভিসা লাইফস্টাইল প্রিপেইড কার্ড কি
এই ভিসা লাইফস্টাইল কার্ডটি হচ্ছে ইবিএল কর্তৃক ইস্যুকৃত একটি ডুয়েল কারেন্সি প্রিপেইড কার্ড যেটি ভিসা নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। ইবিএল এর একুয়া মাস্টারকার্ডটি অনেক জনপ্রিয় একটি প্রিপেইড কার্ড। এই কার্ডটিও একই ধরনের কার্ড এবং সব সুবিধাও এক। শুধু দুইটা কার্ড ভিন্ন ভিন্ন নেটওয়ার্ক ইউজ করে (একটা মাস্টারকার্ড ও অন্যটা ভিসা) । তাই একুয়া এর বিকল্প হিসেবে নিতে পারেন ভিসা লাইফস্টাইল কার্ডটি। এর কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ.
- এটি ডূয়েল কারেন্সি কার্ড মানে এতে একই সাথে টাকা ও ডলারে লেনদেন করা যাবে।
- এটি বিশ্বের যেকোন ভিসা সাপোর্টেড এটিএম ও POS এ ব্যবহার করা যাবে
- এটি দিয়ে দেশি ও বিদেশি সাইটে কেনাকাটা করা যাবে
- এটি পাসপোর্টে এন্ডোর্স করে ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদন করা যাবে
- ইবিএল এর কার্ডের জন্য দেয়া সকল অফারও এই কার্ড দিয়ে উপভোগ করা যাবে
এই বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও এর আরো কিছু সুবিধা আছে।
- ইবিএল এর এটিএম থেকে টাকা উত্তোলন একদম ফ্রি!
- দেশের যেকোন ভিসা সাপোর্টেড এটিএম ব্যবহার করে টাকা তুলতে পারবেন (চার্জ প্রযোজ্য)
- নিয়মিত ইবিএল এর বিভিন্ন অফার থাকে (রেস্টুরেন্ট, হোটেল, এয়ার টিকেট ইত্যাদি)
- ট্রানজেকশন এলার্ট
লাইফস্টাইল কার্ড এর খরচ
কোনকিছু নতুন নিতে গেলে আমরা প্রথমেই খরচে কথা চিন্তা করি। খরচের দিক দিয়ে এই কার্ড খুবই সাশ্রয়ী। প্রিপেইড কার্ড হওয়ায় এতে ক্রেডিট কার্ডের মত খরচ ও ইন্টারেস্ট নিয়ে কোন ঝামেলা নেই। আপনি আপনার দরকার মত আগে কার্ডে টাকা বা ডলার লোড করবেন আর ব্যবহার করবেন। তবুও অল্প কিছু খরচ আছে।
এই কার্ডটি নেয়ার সময় এককালীন মাত্র ৫৭৫ টাকা লাগবে। এবং এই ফি ৩ বছরের জন্য! কোন বার্ষিক রিনিউয়াল ফি নেই।
তবে এসএমএস এলার্ট ফি আছে কিনা আমি এখনো বলতে পারছি না। কারণ আমার এখনো চার্জ কাটেনি। ১ বছর পর কাটলে আপডেট করে দিব এখানে। 🙂
লাইফস্টাইল ভিসা কার্ডটি কীভাবে পাবেন
আপনাকে এই কার্ডটি নিতে আপনার নিকটস্থ ইস্টার্ণ ব্যাংকের শাখায় যেতে হবে। তারপর কার্ড ডিভিশনে গিয়ে বললেই হবে আপনি লাইফস্টাইল কার্ড নিতে চাচ্ছেন। তাহলে তারাই সব প্রসেস শুরু করে দিবে। কার্ড নিতে আপনার নিম্নোক্ত ডকুমেন্ট লাগবে।
- আবেদন ফর্ম (ব্যাংকেই পাবেন)
- দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি
- জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট এর কপি
- ডলারে লেনদেন করতে চাইলে পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে হবে
প্রথমে নির্দেশনা অনুযায়ী ফর্ম পূরণ করুন। কোন কিছু না বুঝলে অফিসারের সাহায্য নিন। এরপর সব হয়ে গেলে সে আপনাকে ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দিতে বলবে। টাকা দেয়া হলে তারা টাকা প্রাপ্তির সিল দিয়ে আপনাকে আবার আগের অফিসারের কাছে আসতে হবে।
দুই রকমের কার্ড হয়। দুটো একই ধরনের। তবে আপনি যদি কাস্টমাইজড কার্ড নেন তাহলে কাস্টমাইজড কার্ডে আপনার নাম লিখা থাকবে। খুব জরুরী না হলে আমি সাজেস্ট করব আপনি কাস্টমাইজড কার্ড নিন। আর না হলে নন-কাস্টমাইজড টা নিয়ে নিন।
কাস্টমাইজড হলে আরেকটা ছোট ফর্ম পূরণ করতে হয় যেভাবে আপনি কার্ডে আপনার নাম লিখা চান। এই কার্ড পেতে এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। কার্ড ব্রাঞ্চে আসলে মেসেজ পাবেন মোবাইলে। পরে বারঞ্চে গেলে আপনাকে কার্ডের পিন দিবে। আর আপনি যদি পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে চান তাহলে সাথে করে পাসপোর্ট নিয়ে যাবেন ও বলবেন আপনি এন্ডর্স করতে চান। তাহলে তারা আপনার কার্ডে এন্ডর্স করে দিবে। এইটা জাস্ট একটা লিমিট যে আপনার পাসপোর্টের অনুকূলে ঐ পরিমাণ ডলার ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হল
নন-কাস্টমাইজড হলে ওইদিনই কার্ড নিতে পারবেন। তবে আমার জানামতে কিছু অপেক্ষা করতে হয় কার্ড এক্টিভেট হতে।
কার্ডে টাকা ও ডলার জমা দেয়া
কার্ডে টাকা বা ডলার জমা দেয়া সহজ। আপনি ক্যাশ কাউন্টারে টাকা জমা দেয়ার স্লিপ পাবেন। সাধারণত ২০ হাজার নিচে হলে ক্রেডিট কার্ড বিল দেয়ার স্লিপ দিয়েই এই কার্ডে টাকা জমা দিতে পারবেন। এর উপরে হলে প্রিপেইডের জন্য আলাদা স্লিপ আছে। ব্যাংকের কাউকে জিজ্ঞেস করলেই হবে।
টাকা জমা দিতে টাকার ঘর পূরণ করুন। আর ডলার লোড করতে হলে ওইদিনের এক্সচেঞ্জ রেট লিখে মোট টাকা লিখে দিলেই হবে। ওরা ওই রেট অনুযায়ী সমমানের ডলার লোড করে দিবে।
কার্ডের ব্যবহার
ইবিএল এর যেকোন এটিএম থেকে পিন ব্যবহার করা একদম ফ্রি টাকা উঠাতে পারবেন। এছাড়া যেকোন ভিসা সাপোর্টেড POS টার্মিনালে পে করতে পারবেন কোন ফি ছাড়াই। তবে NPSB বা অন্য ব্যাংকের ভিসা সাপোর্টেড এটিএম থেকে টাকা উঠাতে ফি লাগবে।
দেশি ইকমার্স সাইটে ব্যবহার করলে মোবাইলে ও ইমেইলে একই সাথে একই OTP যাবে। আপনাকে এই OTP বসিয়ে ট্রানজেকশন করতে হবে।
আর বিদেশি সাইটে ডলার পার্ট ব্যবহার করে লেনদেন করতে আমার মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। কিছু সাইটে জাস্ট কার্ড ডিটেইলস দিয়েই ট্রানজেকশন করতে পেরেছি। কোন OTP লাগে নাই। আবার একটা সাইটে লেনদেন করার পর ট্রানজেকশন সফল হয়েছে কিন্তু কয়েক মিনিট পর অটো কল এসেছিল যে এই লেনদেনটি করতে চাইলে এক চাপুন না হলে দুই টাইপের আরকি। আরেক জায়গায় আবার দেশি সাইটের মতই OTP দিতে হইছে। আমার ধারণা এটা পেমেন্ট প্রসেসরের উপর নির্ভর করে।
তবে ভাল জিনিস হচ্ছে যে শুধু এসএমএস আসলে ঝামেলা হত। কারণ ধরেন আমি বিদেশে আছি তাহলে আমি তো এসএমএস OTP পেতাম না। কিন্তু এখন যেহেতু ইমেইলেও OTP দেয় তাই আর ঝামেলা হবে না।
EBL SKYBANKING
আপনি এই কার্ডটি EBL SKYBANKING এপ এর সাথে লিংক করতে পারবেন। এটি আমার কাছে চমৎকার লেগছে। এর মাধ্যমে আপনি নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারবেন।
- ব্যালেন্স চেক (BDT & USD)
- ট্রানজেকশন হিস্টোরি চেক – শেষ ৫ টি লেনদেন (BDT & USD)
- ফরেইন পার্ট এনাবল ও ডিসাবল
- টাকা থেকে ডলারে ও ডলারে থেকে টাকায় কনভার্ট
- ইন্সট্যান্ট কার্ড ব্লক
- এই এপের অন্যান্য সকল কাজ (বিকাশে লোড, ইউটিলিটি বিল ইত্যাদি)
তো দেখতেই পাচ্ছেন যে এই কার্ড রিলেটেড সব কিছুই আপনি এই এপ দিয়ে করতে পারবেন। আগের মত যে কোন কিছুর জন্যই আপ্নকে আর কাস্টোমার কেয়ারে কল দিতে হবে না।
EBL DIA
ইবিএল দিয়া হচ্ছে একটি ফেসবুক বট। এই ব্যবহারের জন্য আপনাকে ইবিএল দিয়ার ফেসবুক পেইজে মেসেজ দিয়ে ধারবাবাহিক নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে। এছাড়া ভাইবারেও এই বট এভেইলেবল। এর মাধ্যমে আপনি নিম্নোক্ত কাজগুলো করতে পারবেন।
- ব্যালেন্স চেক (BDT & USD)
- ট্রানজেকশন হিস্টোরি চেক – শেষ ৫ টি লেনদেন (BDT & USD)
- মোবাইল রিচার্জ
লাইফস্টাইল কার্ড দিয়ে ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদন
ইন্ডিয়ান ভিসা আবেদনে ইন্ডিয়ান হাই কমিশন আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রমান হিসেবে আন্তর্জাতিক কার্ডের এন্ডর্সমেন্ট গ্রহণ করে। আপনারা যারা ক্যাশ ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করতে চান না তাদের জন্য এই কার্ড চমৎকার একটা উপায়। কারণ এই কার্ড করতে মাত্র ৫৭৫ টাকা খরচ হবে। আর এন্ডোর্স করতে কোন টাকা লাগবে না। আর এন্ডর্স করলেই আপনাকে একসাথে অতগুলো টাকা দিয়ে ডলার কেনার বাধ্যবাধক্তা নেই।
আপডেটঃ ইদানিং শুধু কার্ডের ফটোকপি দিয়ে সবার আবেদন নিচ্ছে না। এর জন্য কার্ডে কমপক্ষে ১৫০ ডলার লোডের স্লিপসহ দিতে হচ্ছে।
শুধুমাত্র পাসপোর্টের পেছনে দেয়া ব্যাংকের সিলের ফটোকপি ও কার্ডের উভয় পাশের ফটোকপি দিয়ে আপনি ভিসা আবেদন করতে পারবেন। তবে আবেদনের সময় আপনি কার্ডের কিছু ডিজিট মুছে দিতে পারেন নিরাপত্তার স্বার্থে।
সম্পর্কিত পোস্ট,
ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করার বিস্তারিত নিয়ম
শেষকথা
লাইফস্টাইল কার্ড নিয়ে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। তারপরেও আরো কোন প্রশ্ন থাকলে করুন। আমি উত্তর দিব। তবে এমন প্রশ্ন করবেন না যার উত্তর এখানেই আছে।
আর আপনার কাছে যদি আপডেট তথ্য থাকে অথবা কোন তথ্য ভুল মনে হয় তাহলে দয়া করে কমেন্ট করে জানান, আমি আপডেট করব। এতে সবারই উপকার হবে। আমি প্রপার ক্রেডিট দেয়ার চেষ্টা করব। অনেক ধন্যবাদ মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। 🙂
নোটিশঃ সম্পুর্ন লেখা কপি করা নিষেধ। কোথাও কোন বিশেষ অংশ সাহায্যের জন্য দিতে পারেন তবে অবশ্যই ক্রেডিট হিসেবে এই পোস্টের লিংক দিবেন। অনেক সময় দিয়ে আপনাদের সুবিধার্ধে এই লেখাটি লিখা হয়েছে, তাই আশা করব কপি পেস্ট থেকে বিরত থেকে লেখকের কষ্টের মূল্য দিবেন। 🙂
Very satisfied to know. thanks.
আমি থাইল্যান্ড যাচ্ছি আগামি মাসে, আপাতত প্ল্যান ৭০০ ডলার ক্যাশ নিয়ে যাবো… প্রায় ১ মাস থাকার প্ল্যান তাই ভাবি টাকার টান পড়লে বিপদ।
আমি অনলাইনে কাজ করি, কোন নির্দিষ্ট স্যালারি নেই দেখে ক্রেডিট কার্ড নিতে পারিনি। এখন এই কার্ড যদি নেই, তাহলে কি থাইল্যান্ড গিয়ে ওখানকার এটিএম থেকে Thai Bhatt উইথড্র করা যাবে? বিষয়টা একটু কনফার্ম করবেন দয়া করে!
আর একটি প্রশ্ন, কয়দিন লাগে কার্ড ইস্যু হতে?
জ্বি এটা দিয়ে থাই বাথ তুলতে পারবেন। এক সপ্তাহ লাগে ইস্যু হতে।
সর্বনিম্ন কত ডলার ডুকানো যাবে??
এমন কোন লিমিট আমার জানা নাই
ভাইয়া লাইফস্টাইল ভিসা কার্ড দিয়ে কি Amazon gift card কেনা যাবে?
যাওয়ার কথা।
যাওয়ার কথা
ভাই,আমার আপাতত পাসপোর্ট নাই।আমি কি পরে এইটার সাথে পাসপোর্ট এড করে ডলারে লেনদেন করতে পারব?
তাহলে এখন শুধু টাকায় লেনদেন করতে পারবেন৷ পরে পাসপোর্ট হলো ডলারে লেনদেন করতে পারবেন।
আমি জানতে চাচ্ছিলাম যে আমার তো পাসপোর্ট নেই। আমি কি এই কার্ড দিয়ে ডলার ব্যাতিত ফেইসবুক বুস্টিং করতে পারব? বাংলাদেশী কারেন্সি দিয়ে?
না, পারবেন না।
১. শুনলাম সোনালী ব্যাংক এর মাধ্যেমে এন্ডর্সমেন্ট না করালে ভিসা হয় না?
২. এই কার্ড দিয়ে কি অনলাইনে ( udemy, etc.. ) সাইট থেকে কোর্স কেনা যাবে?
৩. আম্যাজন, দারাজ এর মতো সাইটে পেমেন্ট করা যাবে?
৪. এই কার্ড দিয়ে ইন্ডিয়া বা অন্য দেশে ভিসা সাপোর্ট এটিএম থেকে কি ক্যাশ টাকা তুলা যাবে?
১. ইন্ডিয়ান ভিসা যেকোন ব্যাংকের এন্ডর্সমেন্ট দিয়ে হয়।
২. যাবে।
৩. যাবে।
৪. যাবে।
আমার একি প্রশ্ন। ইউটিউব ও ফেসবুকের পোস্ট বুস্ট করা যাবে কিনা?
যাবে
হু করা যায় ১০০%
বেশ ভালো লিখেছেন, আমার একটা নেওয়ার ইচ্ছা আছে, আপনার লেখা পড়ে উপকৃত হলাম
ধন্যবাদ ভাই কমেন্টের জন্য। নিয়ে নেন একটা।