Last updated on April 9th, 2020 at 11:57 pm
হ্যালো রিডার!
আপনারা যারা বাইরোডে ভুটান বা নেপাল যেতে চাচ্ছেন তাদের জন্য দরকার হচ্ছে ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা। আমি ২৫ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে ৩ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ভুটান ঘুরে এলাম ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা নিয়ে। আমার ট্রানজিট ভিসার ছবিটি উপরের ফিচার্ড ইমেজে দেখতে পারছেন। আমি এবার আপনাদের জন্য ট্রানজিট ভিসার বিস্তারিত লিখব এখানে।
Quick Navigation
ভারতীয় ট্রানজিট ভিসার আবেদনের প্রক্রিয়া সব প্রায় টুরিস্ট ভিসা আবেদনের মতই, তবে দুটো ডকুমেন্ট এক্সট্রা লাগে।
তাই সবার শুরুতেই আপনাকে বলব আপনি আগে আমার টুরিস্ট ভিসা নিয়ে পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন। কারণ বেশিরভাগ বিষয় একই হওয়াতে আমি আবার এখানে লিখছি না। শুধু যেখানে যেখানে পার্থক্য সেগুলো এখানে লিখব।
ইন্ডিয়ান টুরিস্ট ভিসা আবেদনের বিস্তারিত নিয়ম
ট্রানজিট ভিসা কি?
ট্রানজিট ভিসা হচ্ছে একটা দেশের মধ্য দিয়ে অন্য একটা দেশে যাওয়ার সময় স্বল্প সময় ওই দেশে থাকার অনুমতি। এটা দেশভেদে কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে।
অনেক দেশ অন্য দেশের ভিসা ও এয়ার টিকেট কনফার্ম থাকলে তাদের দেশে কয়েকদিনের বা কয়েক ঘন্টার জন্য ট্রানজিট ভিসা ইস্যু করে যাতে যাত্রীরা ওই শহর ঘুরে দেখতে পারে। যেমন দেখা গেল আপনি যাচ্ছেন আমেরিকা মাঝে আপনার ফ্লাইট বিরতি নিচ্ছে তুর্কিতে আর এমন সময় ফ্লাইট পেছানো হল কয়েক ঘন্টা। এমন ক্ষেত্রে আপনি কয়েক ঘন্টার জন্য ট্রানজিট ভিসা পেতে পারেন যাতে আপনি এয়ারপোর্টে অপেক্ষা না করে ওই শহর ঘুরে দেখতে পারেন।
আবার যেমন আমরা যারা বাইরোডে ভুটান বা নেপাল যাই ইন্ডিয়ার মধ্য দিয়ে তাদেরকে ইন্ডিয়ার ট্রানজিট ভিসা নিতে হয়। এ ভিসা ১৫ দিন মেয়াদি দেয়া হয়। আর প্রতিবার ইন্ডিয়ায় ঢুকে সর্বোচ্চ ৩ দিন থাকা যাবে। ৩ দিনের মাঝেই আমাকে ইন্ডিয়া ত্যাগ করতে হবে।
মনে রাখবেন! একটা বিষয় মোটা দাগে মনে রাখুন যে আপনি ইন্ডিয়ার মধ্য দিয়ে অন্য দেশে যেতে ও সে দেশ থেকে আবার আগের দেশে ফিরে আসতে হলে আপনাকে ডাবল এন্ট্রি ট্রানজিট ভিসা নিয়ে যেতে হবে। সাধারণ টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আপনি যেতে পারবেন না। আর কোনভাবে যদি অন্য দেশ মানে ভুটান বা নেপালে এন্ট্রি নিয়েও থাকেন পরবর্তীতে ইন্ডিয়ান ভিসা না পাওয়ার সম্ভাবনা ৯৯%।
কারণ ভুটান ও নেপালের বর্ডারে ওরা অত বেশি চেক করে না, আপনি শুধু ওদের ইমিগ্রেশনে যেকোনভাবে পৌছাতে পারলেই এন্ট্রি দিয়ে দেয়। তবে পরে ইন্ডিয়া থেকে দেশে আসার সময় চেক করলেও ঝামেলা হবে আর পরবর্তি ভিসা আবেদনে ভিসাও পাবেন না। তাই বাই রোডে ইন্ডিয়ার মধ্য দিয়ে অন্য দেশে দেশে অবশ্যই ট্রানজিট ভিসা নিন।
ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
এখানে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসার আবেদন করতে নিম্নলিখিত কাগজপত্র লাগবে।
- পাসপোর্ট
- এককপি ২x২ ইঞ্চি মাপের প্রিন্টেড ছবি ও আরেকটি সফট কপি (শুধু অনলাইন আবেদনের সময় লাগবে)
- পুরনকৃত ফর্ম (প্রিন্টেড)
- স্মার্ট কার্ড/এনআইডি অথবা জন্ম সনদের ফটোকপি
- ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি (বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বা টেলিফোন বিল)
- পেশার প্রমাণপত্র (বেসরকারি চাকুরিজীবি হলে NOC, সরকারি চাকুরিজীবি হলে NOC/G.O>., ছাত্র হলে আইডি কার্ড বা বেতনের রশিদ, ব্যাবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স এর ফটোকপি, আর পেশা কৃষি হলে জমির খতিয়ানের ফটোকপি)
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ডলার এনডোর্সমেন্ট অথবা ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের কপি
- পাসপোর্ট এর ডাটা পেইজের ফটোকপি (ছবির পাতা)
- সর্বশেষ ইন্ডিয়ান ভিসার ফটোকপি (যদি থাকে)
- অন্য কোন সাপোর্টিং কাগজ যদি দিতে চান।
- পূর্ববর্তি সকল পাসপোর্ট। যদি পুরাতন পাসপোর্ট থাকে তাহলে অবশ্যই দিতে হবে। আর হারিয়ে গেলে জিডি কপি ও লস্ট সার্টিফিকেট দিতে হবে।
- ঢাকা টু বুড়িমারি বাসের রিটার্ন টিকিট (ফটোকপি ও মূল টিকেট)
- যে দেশে যাবেন সে দেশের হোটেল বুকিং
সুতরাং দেখতেই পাচ্ছেন কি কি লাগবে। এখানে ১১ নম্বর পর্যন্ত কাগজগুলো টুরিস্ট ভিসার মতই। শুধুমাত্র ১২ ও ১৩ নম্বর আলাদা। তাই আমি এখানে শুধু এই দুটি কাগজ সম্পর্কে এখানে আলোচনা করব। তাই ১১ নম্বর পর্যন্ত কাগজগুলোর বিস্তারিত পড়ুন এখানে ও ইউটিউবে দেখুন এখানে।
বাসের টিকিট
ইন্ডিয়া এই মুহুর্তে ভুটান যাওয়ার জন্য শুধু Chengrabanda/Jaygaon দিয়ে ও নেপালের জন্য শুধু Chengrabanda/Ranigonj দিয়ে ট্রানজিট ভিসা দেয়। চ্যাংড়াবান্ধা হল বর্ডারের ভারতের অংশের নাম আর আমদের অংশের নাম হল বুড়িমারি।
তাই এই যে দেশের জন্যই ট্রানজিট ভিসা নিতে চান না কেন আপনাকে ঢাকা টু বুড়িমারি পর্যন্ত কনফার্ম বাসের টিকেট দিতে হবে।
ঢাকা থেকে বুড়িমারি পর্যন্ত অনেক বাস আছে যেমন এস, আর ট্রাভেলস, পিংকি, মানিক ইত্যাদি। এছাড়া শ্যামলীর বাস আছে শিলিগুড়ি পর্যন্ত আর ভাড়াও অনেক প্রায় ১৬০০ টাকার মত। এছাড়া ভুটান গেলে আপনার তো আর উলটা শিলিগুড়ি পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই তাই সবদিক বিবেচনায় উপরে উল্লিখিত যেকোন বাসের বুড়িমারি পর্যন্ত রিটার্ন টিকিট কেটে নিন।
ভাড়া নন এসি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, আর এসি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা। আমরা গিয়েছিলাম এস, আর প্লাস এসিতে ভাড়া ছিল ৮০০ টাকা। তখন অনশ্য শীত ছিল, এক সপ্তাহ পরে আসার সময় শুনলাম একটু গরম পড়াতেই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। 🙂
আর কোন কারনে ভিসা না হলে টিকেট ফেরত নিবে, মানে ক্যান্সেল করবে তবে কিছু টাকা কেটে রাখবে। তাই আপনি টিকেট নেয়ার সময় বলে নিন যে ভিসা না হলে টিকেট ফেরত নিবে কিনা বা নিলেও কত টাকা কাটবে। তা না হলে পরে ঝামেলা করতে পারে আবার।
বাস টিকেটের ফটোকপি দিবেন। আর মূল টিকেট পাসপোর্টের সাথে স্ট্যাপল করে দিবেন। মুলকপি পাসপোর্ট এর সাথে ফেরত দিবে।
হোটেল বুকিং
ট্রানজিট ভিসার আবেদনের জন্য আপনাকে সংশ্লিষ্ট দেশের হোটেল বুকিং দেখাতে হবে। আমরা ভুটানের আমাদের টুরের ব্যাপ্তি অনুযায়ী সব কয়দিনের হোটেল বুকিং দেখিয়েছিলাম। আমরা agoda.com ও booking.com থেকে হোটেল বুকিং করেছিলাম। এখানে কোন কার্ড ছাড়াও বুকিং করা যায় কিছু হোটেলে।
তবে কয়েকদিন পর বুকিং ক্যান্সেল করে দিবেন তা না হলে কিন্তু হোটেলগুলো ভাববে আপনি আসবেন তাই ওরা আর বুকিং নিবে না। তাই সিস্টেমটির সঠিক ব্যাবহারের জন্য মনে করে বুকিং ক্যান্সেল করবেন।
ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসার ফরম পুরন
ট্রানজিট ভিসার ফরম পুরন টুরিস্ট ভিসার মতই, তবে ৩য় পেইজে একটু ডিফারেন্ট। ফরম টুরিস্ট ভিসার মতই এই লিংকে গিয়ে পুরন করতে হবে। https://indianvisa-bangladesh.nic.in/visa
- Expected date of arrival দিবেন বাসের টিকেট যেদিনের সেদিন। মানে বাসের টিকেট যদি ধরুন জানুয়ারি ৫ তারিখ রাতের, তাহলে ডেট দিবেন জানুয়ারি ৫। আগের মত একদিন পরে দিলে এখন আর আবেদন জমা নিচ্ছে না।
- travel another country before India এর ঘরে No দিবেন আর travel another country after India তে yes দিবেন ও নিচের ঘরে Bhutan বা Nepal দিবেন।
- ভুটানের জন্য Port of Entry & Exit দুই বারেই দিতে হবে Chengrabanda/Jaygaonআর নেপালের জন্য দিবেন Chengrabanda/Ranigonj
- No. of Entry তে অবশ্যই Double দিবেন
ট্রানজিট ভিসার পোর্ট নির্বাচন সমস্যার সমাধান
অনেকেই ইদানিং ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা ফরম এ পোর্ট সিলেকশন করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ছেন। Chengrabanda/Jaygaon বা Chengrabanda/Ranigonj সিলেক্ট করলেই সব সময় invalid বা invalid character দেখায়. আমার ব্লগে, ফেসবুক পেইজে এবং বিভিন্ন ট্রাভেল গ্রুপে একই সমস্যার কথা বলছেন। আমিও একটি গ্রুপ থেকে এই সমাধানটি দেখলাম এবং কিন্তু সেটি দেখে আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি, পরে একটু চেষ্টা করার পর এই সমস্যার সমাধান করতে পারলাম। এবার ভাবলাম একটা ছোট্ট করে ভিডিও টিউটোরিয়াল করে দেই যাতে আপনাদের সবার বুঝতে সহজ হয়। আশা করি সবার কাজে লাগবে।
ভিসা আবেদন ফি ও ফরম জমা দেয়া এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
ভিসা আবেদন ফি ও ফরম জমা দেয়া এবং পাসপোর্ট সংগ্রহ করা সম্পর্কে জানতে এই পোস্ট দেখুন। কারণ এই সব স্টেপ সব ধরনের ভিসা আবেদনের জন্যই হুবুহ এক ।
কিছু বিষয় জেনে রাখুন
- ট্রানজিট ভিসা আবেদন অন্যান্য ভিসা আবেদনের মতই আপনি এক মাসে আগেই করতে পারেন। তবে জেনে রাখুন যে ইন্ডিয়া শুধু ১৫ দিনের জন্য ট্রানজিট ভিসা দেয়। তাই যত আগেই আবেদন করুন না কেন আপনার যাত্রা শুরুর ১ থেকে ৩ দিন আগেই কেবল পাসপোর্ট ফেরত পাবেন। ওরা আপনার বাস টিকেট অনুযায়ী যাত্রার তারিখ ধরবে।
- ঢাকার যমুনা ফিউচার পার্কে ট্রানজিট ভিসার জন্য একটা কাউন্টার মাত্র, তাই অন্যান্য ভিসার তুলনার এটা জমা দিতে একটু বেশি সময় লাগে।
- সব সময় নতুন ছবি দিয়ে ভিসা আবেদন করবেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
বাংলাদেশীদের জন্য ইন্ডিয়ান ভিসা ফ্রি। তবে IVAC এ ইন্ডিয়ান সকল ভিসা আবেদন ফি হচ্ছে ৮০০ টাকা।
আশা করি ইন্ডিয়ান ট্রানজিট ভিসা আবেদন সম্পর্কে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। তারপরেও আরো কোন প্রশ্ন থাকলে করুন। আমি উত্তর দিব। প্রশ্নের জন্য সাইটের মেইন কমেন্ট বক্সে প্রশ্ন করলে আমার কাছে ইমেইলে নোটিফিকেশনে আসবে তাই দ্রুত উত্তর দিতে পারব। আর ফেসবুক কমেন্ট করলে আমাকে ম্যানুয়্যালি চেক করতে হয়, তাই একটু দেরি হতে পারে।
আর আপনার কাছে যদি আপডেট তথ্য থাকে অথবা কোন তথ্য ভুল মনে হয় তাহলে দয়া করে কমেন্ট করে জানান, আমি আপডেট করব। এতে সবারই উপকার হবে। আমি উপযুক্ত ক্রেডিট দেয়ার চেষ্টা করব।
অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য।
নোটিশঃ সম্পুর্ন লেখা কপি করা নিষেধ। কোথাও কোন বিশেষ অংশ সাহায্যের জন্য দিতে পারেন তবে অবশ্যই ক্রেডিট হিসেবে এই পোস্টের লিংক দিবেন। অনেক সময় দিয়ে আপনাদের সুবিধার্ধে এই লেখাটি লিখা হয়েছে, তাই আশা করব কপি পেস্ট থেকে বিরত থেকে লেখকের কষ্টের মূল্য দিবেন। 🙂
লেখক সম্পর্কে
ভালো লাগে নিত্য-নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে ও অন্যকে জানাতে। লিখতে অনেক ইচ্ছে হয় কিন্তু সময় বের করে লিখতে পারি না। আর কিছু লিখতে পারলে অনেক ভালো লাগে। ২০১৩ সাল থেকে ফ্রিল্যান্স ইন্টারনেট রিসার্চার ও সেলস এসোসিয়েট হিসেবে কাজ করছি আপওয়ার্কে। বর্তমানে বি.এসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশে। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মন নেই, পড়তে হচ্ছে বলে পড়ছি। ক্যারিয়ারে নিজের মত করে কিছু করতে মন চায়। ভ্রমনের প্রতি আকর্ষন তীব্র আমার। তবুও দেখা যায় বছর শেষে দু এক জায়গার বেশি যাওয়া হয় না। 🙁 আরো পড়ুন https://nirbodh.com/about/
Apni aitar ans paisen?
আমার ইন্ডিয়ার মাল্টিপল এন্ট্রি ট্যুরিস্ট ভিসা আছে। আমি যেদিন ইন্ডিয়া পৌছাবো ঐ দিনই অন্য কোন দেশে যেমন চায়না/থাইল্যান্ড/ইন্দোনেশিয়া ফ্লাই করতে চাই সেক্ষেত্রে কোন টানজিট ভিসার দরকার আছে কিনা? জানুয়ারিতে আমি সাংহাই থেকে দিল্লি এবং দিল্লীর থেকে কলকাতা এরপর গেদে বর্ডার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছি। কোন সমস্যা হয়নি। যদি কেউ এই বিষয়ে সঠিক তথ্য অথবা অভিজ্ঞতা থাকলে জানাবেন। ইন্ডিয়ান দূতাবাসের এই বিষয়ে কোন নির্দিষ্ট নিয়মের লিংক জানা থাকলে শেয়ার করবেন প্লিজ।
দরকার নেই। তবে ইমিগ্রেশন অফিসার সবাইকে সব সময় ফ্লাই করতে দেয় না।